শিরোনাম ::
নোটিশ ::
বগুড়ার মহাস্থানে চলছে মাদক ও দেহ ব্যবসা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

গোলাম রব্বানী শিপন, স্টাফ রির্পোটার
- আপডেট সময় : ১১:২২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩
- / 215

বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় হরদমে দিবানিশি চলছে মাদক ও দেহব্যবসা। বিশেষ করে গড়মহাস্থান শালবাগানের পাশে কয়েকজন চিহ্নিত নারী সর্দারানী প্রকাশ্যে খদ্দের সংগ্রহ করে তাদের বাড়ীতে পতিতাবৃত্তির ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতায় এলাকার যুব সমাজ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বেশ কয়েক মাস হলো মহাস্থান আবাসিক হোটেল গুলোতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দেহব্যবসা বন্ধ হলেও আলোচিত কিছু আবাসিক হোটেলে আবারও গোপনে অবৈধ কর্মকান্ডে শুরু হয়েছে।
গত ২০২০ সালের শুক্রবার ১১ জানুয়ারি গড়-মহাস্থান শালবাগানের বিশিষ্ট মাদক ও পতিতা সম্রাজ্ঞী পারভিন আক্তার পারীর বাড়িতে শিবগঞ্জ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১ খদ্দের সহ ৩ পতিতাকে আটক করেছে।
এসময় পারী ছদ্মবেশে পালিয়ে যায়। এর আগেও পারীকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মাদক সহ একাধিক মামলা রয়েছে। তারপরেও থেমে নেই তাদের পতিতা ব্যবসা। একই ভাবে গত ২০২০ সালের
(৫জুন) গাইবান্ধা পলাশবাড়ীর নুনেগাড়ী গ্রামের আব্দুর রহমানের কন্যা গাইবান্ধা মহিলা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী (১৭)
কে বাড়ীতে আটকে পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করায় ওই কিশোরী পালিয়ে স্থানীয়দের কাছে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ এসে ওই কিশোর জবান বন্দীতে বাড়ীর মালিক মিঠু মিয়া ও তার স্ত্রী শেলী বেগমকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়াও উল্লেখ্য এলাকায় একাধিক পতিতা পোষক নারীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পতিতা নিয়ে এসে বাড়ি ভাড়া দিয়ে পতিতা ব্যবসা করছে। বেশকিছু অসাধু ব্যক্তিরা এদের মোটা অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনিক দিকসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে গড়মহাস্থান শালবাগানের পাশে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই এলাকার আলোচিত ৩ বোনসহ গুটি কয়েক পতিতা সর্দারানী নিয়মিত পতিতা আমদানি করে অনৈতিক ও অসমাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের একাধিক বাড়ী রয়েছে। বাড়ীর আগে পিছে প্রায় ২/৩টি করে গোপন দরজা রয়েছে। প্রশাসনের অভিযান চালানোর সংবাদ পেয়ে তারা বিভিন্ন দরজা দিয়ে খদ্দের ও পতিতা পালাতে সহায়তা করে। যার ফলে পুলিশ অভিযানে গেলেও তাদের হাতেনাতে আটক করতে পারে না। এভাবেই যুগযুগ ধরে চলছে তাদের দেহব্যবসার আধিপত্য। বিশেষ করে শুক্রবার জুম্মার দিন তাদের পতিতাবৃত্তির ধুম পড়ে যায়। কারণ শুক্রবার মহাস্থান বাজার এলাকায় অনেক মাজার জিয়ারতকারী ও পর্যটকদের ভিড়ে তারা মিশে যায়। পতিতার আকঁড়া ওই বাড়ী গুলোতে মাজার জিয়ারতকারী বাসা ভাড়া নিয়েছে বলে অপকৌশলে চালিয়ে যায়। গত বছরে শালবাগানের পাশেই মানকালী এলাকায় গাঁজা ও ফেন্সিডিলের ৩ টি বড় বড় চালান সহ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। এভাবেই দিবানিশি চলে মাদকের হাতবদল। বিশেষ করে মহাস্থান প্রতাববাজু করতোয়া ব্রিজের পূর্বপাশে শুধু এক ব্যক্তিই প্রতিদিন কেজি কেজি গাঁজা বিক্রি করে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছে। তার ২টি আলিশান বাড়ী রয়েছে। মাদক বিক্রির জন্য একাধিক নারী পুরুষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদকের কেনাবেচা হয়। একই ভাবে মহাস্থান মোন্নাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মহাস্থান ফুটওভার ব্রিজের আশেপাশে সকাল থেকেই মাদক বিক্রি করতে দেখা যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মোটরসাইকেল অথবা পায়ে হেঁটেই সুকৌশলে বিক্রি করেন।
আর এসব মাদক ও দেহ- ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করছে মোটা অর্থলোভী কিছু স্বার্থন্বেষী মহল।
একটি স্বনির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ছেড়ে সু-পথে ফেরার অঙ্গিকারে শিবগঞ্জ থানায় মুচলেকা দিয়েও তারা মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে।
এবিষয়ে রায়নগর ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আলমগীর হোসেন লালু বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে শিবগঞ্জ থানায় দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাদের আটকও করে। ২দিন পরে তারা জামিনে এসে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এবিষয়ে রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল শফি বলেন, রায়নগর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নেই। মহাস্থানগড় এলাকায় যদি কেউ দেহব্যবসা বা মাদক ব্যবসা করে ধরাপড়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মহাস্থান গ্রামের সমাজ সেবক শুক্রর আলী বলেন, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে শায়ীত আছেন বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ সুলতান। তার মাজারের পাশে মাদক ও দেহ-ব্যবসা অত্যান্ত দুঃখজনক। মাজারের পবিত্রতা নষ্ট করে প্রতিদিন ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হিরোইন, গাঁজা, চোলাই মদসহ নানা ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি বিক্রি হচ্ছে অবাধে। যার প্রমান গ্রামে বৈরাগত যুবকের আনাগোনা।৷ শুধু তাই নয়, বিপদগামী আর নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
এসবে জড়িতরা কোন আইন কানুন, সামাজিক বন্ধন আর দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ও দেহ ব্যবসার মত গুরুতর অপরাধ। এধরণের অসামাজিক কর্মকান্ড তড়িৎ বন্ধে উর্দ্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয় জনসাধারন ও সচেতন মহল।