বগুড়া ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo আদমদীঘিতে মৎস্য ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা,আটক ২ Logo সোনাতলার আলোর প্রদীপ যুব সংগঠনের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা Logo সারিয়াকান্দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাদী আলম লিপি’র সমর্থককে অপহরন করার অভিযোগ Logo কাহালুতে নিউ সানমুন জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কনসালটেশন সেন্টারের উদ্বোধন Logo গাবতলীতে ফোকাস সোসাইটির উদ্যোগে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণের সনদপত্র বিতরণ Logo গাবতলী আলিম মাদ্রাসার উদ্যোগে আলেম, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নিয়ে আলোচনা সভা Logo বগুড়ায় মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান Logo কাহালু পাইকড় জামালিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo মোকামতলা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ১ Logo কাহালুতে বিএনপির সমাবেশ ও সাবেক এম পি ডাক্তার জিয়াউল হক মোল্লার কুশপুত্তলিকা দাহ
নোটিশ ::
"বগুড়া বুলেটিন ডটকম" এ আপনাকে স্বাগতম। বগুড়ার প্রত্যেক উপজেলায় ১জন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে। ফাঁকা উপজেলাসমূহ- সদর, শাজাহানপুর, ধনুট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম

জামাইদের সমাদর করতে ব্যায় হবে লক্ষ লক্ষ টাকা

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বগুড়ার কাহালুতে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা

আব্দুল মতিন, কাহালু(বগুড়া)প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩
  • / 132
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বুধবার থেকে বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্র ইউনিয়নের ভেঁবড়া মেলা দিয়ে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা। জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ধরেই আয়োজন করা হচ্ছে প্রায় অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার। জামাই মেলায় জামাইদের সমাদর করতে ব্যয় হবে শুশ্বরের লক্ষ লক্ষ টাকা। কয়েক ”শ” বছর আগে অসংখ্য সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলার অনেক আনাগোনা ছিল অত্র উপজেলায়। প্রবীণদের ধারনা মতে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারী। ঐ সময় এখানকার মানুষের অসুখ-বিসুখ ও বিপদে-আপদে সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলাদের সাহায্য নিয়ে বিপদ মুক্ত হত। তাদের দেওয়া তেল, পানিপড়া, তাবিজ, গাছ-গাছরার ওষুধে মানুষরা রোগমুক্ত হত। আর আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারীদের ধর্ম, বর্ণ নির্বিষে সব মানুষই সম্মান করতো। এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভক্তও ছিল অনেকে। বিশেষ করে চুল জটাধারী যে মহিলারা ছিল তাদেরকে বলা হত মাদার। এই মহিলাদের মৃত্যুর পর থেকেই তাদের স্বরনেই সম্ভবত উপজেলার কোন কোন এলাকায় মেলা করা হত। আবার কারো কারো মতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন বৃষ্টির পানি হতনা তখন স্থানীয় লোকজন বৃষ্টির জন্য লাল শালু নিশান নিয়ে নেচে গেয়ে গ্রামে গ্রামে চাল তুলতো। সেই চাল দিয়ে বাঁশের মাথায় লাল শালু নিশান টাঙ্গিয়ে মেলার আয়োজন করা হত। আয়োজকরা সেখানে রান্না-বান্না করে সবাই মিলে খেয়ে একসাথে বৃষ্টির জন্য আরাধনা করতো। সেই সময় থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই মেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগে এই মেলা গুলোকে মাদার পীরের মেলা অথবা নিশানের মেলা বলা হয়। পরবর্তিতে এই মেলাগুলোকে ঘিরে অত্র এলাকার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজে মেতে উঠে সকল বর্ণের মানুষ। মেলা উপলক্ষ্যে জামাই মেয়ে সহ নিকট আতœীয় স্বজনদের ধুমধাম করে খাওয়ানো হয়। যার ফলে পরবর্তিতে এই মেলাগুলোর নাম হয় জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা। বর্তমানে বোরো ধান কাটার পর ধনী-গরীব সকলের হাতে থাকে মোটামুটি টাকা পয়সা। সে কারণে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৫০ টি স্থানে একদিনের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলাগুলোর মধ্যে ঢুকলেই মনে হবে বাংলা সংস্কৃতির অনেক কিছু এখনো হারিয়ে যায়নি। প্রতিটি মেলাতে চলে বাঙ্গালীর চিরায়িত লাঠি খেলা, পাতা খেলা, চালুন খেলা সহ বিনোদন মুলুক কতই না খেলা। এসবের পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও চরকি। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে চলছে গৃহনীদের ঘর সাজানো ও ধোয়ামুছার কাজ। সেখানে মেলা হবে তার আশে-পাশের গ্রাম গুলোতে একদিন আগেই দাওয়াত করে আনা হয় জামাই, মেয়ে ও নিকট আতœীয়দের। তাদের খাওয়ানো হয় মধু মাস জ্যৈষ্ঠের বিভিন্ন ফল ফলাদি। অত্র উপজেলায় জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়েই থাকবে জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার উৎসবের আমেজ। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই থাকে মেলাতে খরচের প্রতিযোগিতা। আত্বীয় স্বজনদের যে যত ভাল সমাদর করতে পারে তার প্রসংশা হয় লোকজনের মধ্যে। মেলাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পরিচিত লোক দেখলেই স্থানীয় তাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সমাদর করেন। এই মেলা উপলক্ষ্যেই গোটা কাহালু উপজেলা যেন হয়ে উঠে সকল বর্ণের মানুষের মিলন মেলা। মেলা গুলোর আয়োজন দেখলেই মনে হয় বাংলা সংস্কৃতির কোন কিছুই এখনো হারিয়ে যায়নি অত্র এলাকা থেকে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা প্রাচীন এই মেলা গুলোকে যেন কোন অপসংস্কুতি গ্রাস করতে না পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জামাইদের সমাদর করতে ব্যায় হবে লক্ষ লক্ষ টাকা

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বগুড়ার কাহালুতে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা

আপডেট সময় : ০১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

বুধবার থেকে বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্র ইউনিয়নের ভেঁবড়া মেলা দিয়ে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা। জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ধরেই আয়োজন করা হচ্ছে প্রায় অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার। জামাই মেলায় জামাইদের সমাদর করতে ব্যয় হবে শুশ্বরের লক্ষ লক্ষ টাকা। কয়েক ”শ” বছর আগে অসংখ্য সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলার অনেক আনাগোনা ছিল অত্র উপজেলায়। প্রবীণদের ধারনা মতে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারী। ঐ সময় এখানকার মানুষের অসুখ-বিসুখ ও বিপদে-আপদে সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলাদের সাহায্য নিয়ে বিপদ মুক্ত হত। তাদের দেওয়া তেল, পানিপড়া, তাবিজ, গাছ-গাছরার ওষুধে মানুষরা রোগমুক্ত হত। আর আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারীদের ধর্ম, বর্ণ নির্বিষে সব মানুষই সম্মান করতো। এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভক্তও ছিল অনেকে। বিশেষ করে চুল জটাধারী যে মহিলারা ছিল তাদেরকে বলা হত মাদার। এই মহিলাদের মৃত্যুর পর থেকেই তাদের স্বরনেই সম্ভবত উপজেলার কোন কোন এলাকায় মেলা করা হত। আবার কারো কারো মতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন বৃষ্টির পানি হতনা তখন স্থানীয় লোকজন বৃষ্টির জন্য লাল শালু নিশান নিয়ে নেচে গেয়ে গ্রামে গ্রামে চাল তুলতো। সেই চাল দিয়ে বাঁশের মাথায় লাল শালু নিশান টাঙ্গিয়ে মেলার আয়োজন করা হত। আয়োজকরা সেখানে রান্না-বান্না করে সবাই মিলে খেয়ে একসাথে বৃষ্টির জন্য আরাধনা করতো। সেই সময় থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই মেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগে এই মেলা গুলোকে মাদার পীরের মেলা অথবা নিশানের মেলা বলা হয়। পরবর্তিতে এই মেলাগুলোকে ঘিরে অত্র এলাকার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজে মেতে উঠে সকল বর্ণের মানুষ। মেলা উপলক্ষ্যে জামাই মেয়ে সহ নিকট আতœীয় স্বজনদের ধুমধাম করে খাওয়ানো হয়। যার ফলে পরবর্তিতে এই মেলাগুলোর নাম হয় জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা। বর্তমানে বোরো ধান কাটার পর ধনী-গরীব সকলের হাতে থাকে মোটামুটি টাকা পয়সা। সে কারণে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৫০ টি স্থানে একদিনের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলাগুলোর মধ্যে ঢুকলেই মনে হবে বাংলা সংস্কৃতির অনেক কিছু এখনো হারিয়ে যায়নি। প্রতিটি মেলাতে চলে বাঙ্গালীর চিরায়িত লাঠি খেলা, পাতা খেলা, চালুন খেলা সহ বিনোদন মুলুক কতই না খেলা। এসবের পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও চরকি। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে চলছে গৃহনীদের ঘর সাজানো ও ধোয়ামুছার কাজ। সেখানে মেলা হবে তার আশে-পাশের গ্রাম গুলোতে একদিন আগেই দাওয়াত করে আনা হয় জামাই, মেয়ে ও নিকট আতœীয়দের। তাদের খাওয়ানো হয় মধু মাস জ্যৈষ্ঠের বিভিন্ন ফল ফলাদি। অত্র উপজেলায় জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়েই থাকবে জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার উৎসবের আমেজ। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই থাকে মেলাতে খরচের প্রতিযোগিতা। আত্বীয় স্বজনদের যে যত ভাল সমাদর করতে পারে তার প্রসংশা হয় লোকজনের মধ্যে। মেলাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পরিচিত লোক দেখলেই স্থানীয় তাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সমাদর করেন। এই মেলা উপলক্ষ্যেই গোটা কাহালু উপজেলা যেন হয়ে উঠে সকল বর্ণের মানুষের মিলন মেলা। মেলা গুলোর আয়োজন দেখলেই মনে হয় বাংলা সংস্কৃতির কোন কিছুই এখনো হারিয়ে যায়নি অত্র এলাকা থেকে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা প্রাচীন এই মেলা গুলোকে যেন কোন অপসংস্কুতি গ্রাস করতে না পারে।