বগুড়া ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
নোটিশ ::
"বগুড়া বুলেটিন ডটকম" এ আপনাকে স্বাগতম। বগুড়ার প্রত্যেক উপজেলায় ১জন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে। ফাঁকা উপজেলাসমূহ- সদর, শাজাহানপুর, ধনুট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম

বগুড়ায় ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, দেড় লক্ষ টাকায় ধামাচাপা

গোলাম রব্বানী শিপন, স্টাফ রির্পোটার
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
  • / 125
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
আইনকে তোয়াক্কা না করে  ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছে গ্রাম্য শালিসদাররা। তাদের হস্তক্ষেপে দেশের  প্রচলিত আইনে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে ধর্ষকরা। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা ১১নং দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাঙ্গাল পাড়া আদর্শ  গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামে বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে।
সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১টি সরকারি ঘর বরাদ্দ মেলে কোরবান আলীর পুত্র ভূমিহীন হতদরিদ্র সোনা মিয়া (৩৮) এর। সোনা মিয়ার ১ ছেলে ১ মেয়ে। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটার পর ৬ষ্ট শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে সরকারি আশ্রয়ণে পাওয়া বাড়িতেই বসবাস করতেন। আর ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় অবস্থান করেন। এদিকে জীবিকার তাগিদে সোনা মিয়া রাজমিস্ত্রীর কাজে সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। আর এই সুযোগই লুফিয়ে নেয় একই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডলের পুত্র সম্পর্কে চাচা নামক লম্পট মৃত ধলু মিয়া (৬০) ও পাশের উজগ্রাম জানপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের পুত্র মোস্তাফিজার রহমান (৪৫)। রাস্তা সংলগ্ন আশ্রয়ণ বাড়িতে বাবার সাথে বসবাস করতেন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী।
গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন বাড়িতে প্রবেশ করে নানা ভয়ভীতি দেখি দফায় দফায় ধর্ষণ করে চাচা ধলু মিয়া। ধলু একাধিক বার ধর্ষণ করে পরে পাশ্ববর্তী গ্রামের তার পূর্বপরিচিত মোস্তাফিজার রহমানকে দিয়ে ধর্ষণ করতে বাধ্য করায়। একপর্যায়ে ২ জনেই অমানবিক ভাবে ধর্ষণে মেতে ওঠেন। কিন্তু নাবালিকা স্কুলছাত্রী এতটা নির্যাতনের পড়েও লম্পটদের ভয়ে  ও লোকলজ্জায় কাউ কে কিছুই বলতে পারেনি। এ অবস্থায় সে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সে তার প্রতিবেশী চাচীকে ঘটনার বিস্তারিত বলেন। এনিয়ে এলাকায় কান ঘোষাঘোষি সৃষ্টি হয়।
এরপর এলাকায় ভূমিদস্যু নামে পরিচিত জয়ফুল মিয়া ধর্ষিতাকে আইনের দ্বারস্থ না করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তার নেতৃত্বে অভিযুক্ত ২ ধর্ষককে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। সেই জরিমানার টাকা থেকে ভূমিদস্যু জয়ফুল এবং তার নেতৃত্বে  শালিসকারী মাতব্বর এবং পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ৫০ হাজার টাকা ওঠে তাদের পেটে। আর ধর্ষিতার পরিবারকে দেয়া হয় ১ লক্ষ টাকা।
তবে শর্তসাপেক্ষে ধর্ষিতার গর্ভপাত ঘটানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন মাতব্বররা। পরে ধর্ষিতাকে গর্ভপাতও ঘটায় তারা।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ রমজান। ধর্ষিতা ভিকটিমের পিতার ভিডিও ধারনকৃত অভিযোগে জানা যায়, আমি গরীব মানুষ মামলা করলে গ্রামে থাকতে পারবো না। এবং এ বিষয়টি টাকা নিয়ে আপোষ মিমাংসা করার জন্য তাকে নানা ভাবে  চাপ প্রয়োগ করা হয়।
পরে জরিমানার ১ লাখ ৫০হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান ভূমিদস্যু মামা জয়ফুল আর তার মাতব্বররা।
স্থানীয়রা জানান, লম্পটদের সম্পর্কে চাচা ভাতিজি সম্পর্ক হলেও স্কুল পড়ুয়া কিশোরীকে কিভাবে এহেন জঘন্য কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। টাকা জরিমানা  দিয়ে ধর্ষকেরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে সমাজে এধরনের ঘটনা অহরহ ঘটবে এবং লাভবান হবে মাতব্বররা।
এ বিষয়ে সালিশে নেতৃত্ব দানকারী জয়ফুল জানান, তিনি দুই পক্ষের অনুরোধে কয়েকজন মিলে সমাঝোতা করেছি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা, এমন ঘটনা ঘটেই থাকে।
এবিষয়ে গাবতলী উপজেলার ১১ নং দক্ষিণপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে জানলে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনেছি ঘটনা সত্য।  সমাজের কিছু দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের জন্য সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অপরাধীরা এভাবেই পার পাচ্ছে।  তিনি ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বগুড়ায় ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, দেড় লক্ষ টাকায় ধামাচাপা

আপডেট সময় : ১১:০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
আইনকে তোয়াক্কা না করে  ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছে গ্রাম্য শালিসদাররা। তাদের হস্তক্ষেপে দেশের  প্রচলিত আইনে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে ধর্ষকরা। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা ১১নং দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাঙ্গাল পাড়া আদর্শ  গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামে বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে।
সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১টি সরকারি ঘর বরাদ্দ মেলে কোরবান আলীর পুত্র ভূমিহীন হতদরিদ্র সোনা মিয়া (৩৮) এর। সোনা মিয়ার ১ ছেলে ১ মেয়ে। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটার পর ৬ষ্ট শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে সরকারি আশ্রয়ণে পাওয়া বাড়িতেই বসবাস করতেন। আর ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় অবস্থান করেন। এদিকে জীবিকার তাগিদে সোনা মিয়া রাজমিস্ত্রীর কাজে সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। আর এই সুযোগই লুফিয়ে নেয় একই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডলের পুত্র সম্পর্কে চাচা নামক লম্পট মৃত ধলু মিয়া (৬০) ও পাশের উজগ্রাম জানপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের পুত্র মোস্তাফিজার রহমান (৪৫)। রাস্তা সংলগ্ন আশ্রয়ণ বাড়িতে বাবার সাথে বসবাস করতেন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী।
গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন বাড়িতে প্রবেশ করে নানা ভয়ভীতি দেখি দফায় দফায় ধর্ষণ করে চাচা ধলু মিয়া। ধলু একাধিক বার ধর্ষণ করে পরে পাশ্ববর্তী গ্রামের তার পূর্বপরিচিত মোস্তাফিজার রহমানকে দিয়ে ধর্ষণ করতে বাধ্য করায়। একপর্যায়ে ২ জনেই অমানবিক ভাবে ধর্ষণে মেতে ওঠেন। কিন্তু নাবালিকা স্কুলছাত্রী এতটা নির্যাতনের পড়েও লম্পটদের ভয়ে  ও লোকলজ্জায় কাউ কে কিছুই বলতে পারেনি। এ অবস্থায় সে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সে তার প্রতিবেশী চাচীকে ঘটনার বিস্তারিত বলেন। এনিয়ে এলাকায় কান ঘোষাঘোষি সৃষ্টি হয়।
এরপর এলাকায় ভূমিদস্যু নামে পরিচিত জয়ফুল মিয়া ধর্ষিতাকে আইনের দ্বারস্থ না করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তার নেতৃত্বে অভিযুক্ত ২ ধর্ষককে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। সেই জরিমানার টাকা থেকে ভূমিদস্যু জয়ফুল এবং তার নেতৃত্বে  শালিসকারী মাতব্বর এবং পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ৫০ হাজার টাকা ওঠে তাদের পেটে। আর ধর্ষিতার পরিবারকে দেয়া হয় ১ লক্ষ টাকা।
তবে শর্তসাপেক্ষে ধর্ষিতার গর্ভপাত ঘটানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন মাতব্বররা। পরে ধর্ষিতাকে গর্ভপাতও ঘটায় তারা।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ রমজান। ধর্ষিতা ভিকটিমের পিতার ভিডিও ধারনকৃত অভিযোগে জানা যায়, আমি গরীব মানুষ মামলা করলে গ্রামে থাকতে পারবো না। এবং এ বিষয়টি টাকা নিয়ে আপোষ মিমাংসা করার জন্য তাকে নানা ভাবে  চাপ প্রয়োগ করা হয়।
পরে জরিমানার ১ লাখ ৫০হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান ভূমিদস্যু মামা জয়ফুল আর তার মাতব্বররা।
স্থানীয়রা জানান, লম্পটদের সম্পর্কে চাচা ভাতিজি সম্পর্ক হলেও স্কুল পড়ুয়া কিশোরীকে কিভাবে এহেন জঘন্য কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। টাকা জরিমানা  দিয়ে ধর্ষকেরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে সমাজে এধরনের ঘটনা অহরহ ঘটবে এবং লাভবান হবে মাতব্বররা।
এ বিষয়ে সালিশে নেতৃত্ব দানকারী জয়ফুল জানান, তিনি দুই পক্ষের অনুরোধে কয়েকজন মিলে সমাঝোতা করেছি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা, এমন ঘটনা ঘটেই থাকে।
এবিষয়ে গাবতলী উপজেলার ১১ নং দক্ষিণপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে জানলে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনেছি ঘটনা সত্য।  সমাজের কিছু দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের জন্য সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অপরাধীরা এভাবেই পার পাচ্ছে।  তিনি ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।