বগুড়া ১১:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo সোনাতলায় আমন ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন Logo কাহালুতে ৩ ছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবী, গ্রেফতার ১ Logo বগুড়া- ১ আসনে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করলেন নৌকা মার্কার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান Logo গাবতলীতে রাধা গোবিন্দের রাস লীলা উপলক্ষে পদাবলী কীর্তন ও ভোগমহোৎসব Logo কাহালুর ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রণোদনার টাকা বিতরণ Logo সারিয়াকান্দিতে মাদক ব্যবসায়ীসহ গ্রেফতার Logo বগুড়ায় জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন যারা Logo আদমদীঘিতে রাস পূর্নিমা অনুষ্ঠিত Logo বগুড়া-৭আসনে ডাঃ নাননু আ.লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় গাবতলীতে আনন্দ মিছিল Logo বগুড়া- ১ আসনে আ’লীগ থেকে সাহাদারা মান্নান মনোনয়ন পাওয়ায় মিষ্টি বিতরণ
নোটিশ ::
"বগুড়া বুলেটিন ডটকম" এ আপনাকে স্বাগতম। বগুড়ার প্রত্যেক উপজেলায় ১জন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে। ফাঁকা উপজেলাসমূহ- সদর, শাজাহানপুর, ধনুট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম

বগুড়া সদরে আইপিএল ও ওয়ান এক্স বেট জুয়ায় ভাসছে শিক্ষার্থীরাঃ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

শাফায়াত সজল, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
  • / 159
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
মোঃ তৌকির আহমেদ (ছদ্মনাম)। বয়স ২৫ ছুঁইছুঁই। একজন টগবগে যুবক। মা বাবার স্বপ্ন ছেলেকে একজন বড় পুলিশ অফিসার বানাবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তৌকির এখন উচ্চ শিক্ষার শেষ ধাপে। চাকুরীর জন্য পরীক্ষাও দিয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়ে ওঠেনি এখনো। মা বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তৌকির যখন বাড়ির বাহিরে থেকে পড়াশোনা করছিলো তখনই তার পরিচিত হয় তার এক সহপাঠির সাথে, নাম সাকিব হাসান (ছদ্মনাম)। তার বন্ধু তাকে বেকার জীবনে পরিশ্রম ছাড়ায় শর্টকার্ট পদ্ধতিতে বড়লোক হওয়ার গল্প শোনায়। বন্ধুর কাছে প্রচুর টাকা দেখে তৌকিরের লোভে পড়তে আর দেরী হলো না।পরিশ্রম ছাড়ায় কম সময়ে ধনী হওয়ার লোভ তাকে নিমিষেই গ্রাস করে ফেললো। সাকিব তৌকিরের ফোন নিয়ে একটি এপস ডাউনলোড দিয়ে তা ইন্সটল করে দিলো। তারপর কিছু তথ্য দিয়ে খুলে দিলো একটি আইডি। পাশাপাশি লেনদেনের জন্য নগদ, রকেট কিংবা বিকাশ একাউন্ট। সম্পন্ন হলো বেটিংয়ের ১ম ধাপ।
এইভাবেই তৌকির শুরু করলো অনলাইন জুয়ার দিকে পথ চলা। শুরুতে কিছুদিন বেটিংয়ে টাকা লাগিয়ে লাভ দ্বিগুণ হলেও পরবর্তীতে সে পালাক্রমে হারতে থাকে। একপর্যায়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় বাড়ি থেকে মিথ্যা বলে টাকা নেওয়া। তারপর নিকট বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে শুরু করলো।দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার ঋণের বোঝা। অনলাইন বেটিং বা জুয়াতে টাকা লাগিয়ে জেতার চেয়ে পরাজিত হওয়ার সংখ্যাটায় বেশি। পাওনাদারদের টাকার চাপে একসময় সে হতাশ ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু অপরদিকে লাভবান হয় অনলাইন জুয়ার যারা এজেন্ট। এরা সাধারণ, সহজ সরল মানুষদের লোভ দেখিয়ে ১টি আইডি ও টাকা লেনদেনের একাউন্ট খুলে দিয়ে টাকা দিয়ে জুয়াতে বাজি ধরতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। কারণ যিনি টাকা বাজি ধরবে তিনি জিতুক কিংবা হারুক সেই টাকার শতকরা ২% থেকে ৫% লভ্যাংশ পাবে এজেন্ট।
এখন দিনমজুর, শ্রমিক কিংবা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও অনলাইন জুয়া (ওয়ান এক্স বেট) এর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। এই জুয়াটি খেলতে শুধুমাত্র স্মার্ট ফোন থাকলেই হয় বিধায় তাদের অপকর্মের কথা অধিকাংশ অভিভাবকেরাও জানেনা। বেটিং জুয়ারুদের এখন আরো পোয়াবারো অবস্থা। কারণ তাদের বেটিং খেলার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশে অনুষ্ঠিতব্য আইপিএল ক্রিকেট খেলা। আইপিএল খেলা মূলত তাদের দেশ জাতির সুনাম বৃদ্ধির জন্য আয়োজন করা হলেও আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তিরা এটিকে বেটিং বা জুয়া খেলার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। কখনো তারা প্রতি বল, প্রতি ওভার, প্রতি রান কিংবা প্রতি উইকেটের উপরে এই জুয়া বা বাজি ধরে থাকে। 1X বেট মূলত অবৈধ ডলার ব্যবসার আরেকটা উদাহরণ। এইখানে প্রতিটি কয়েনকে ডলারে তারপর ডলারকে টাকায় ভাঙ্গানো হয়ে থাকে। যা সম্পুর্ন বেআইনী, অবৈধ, নিকৃষ্ট ও জঘন্য একটা অপরাধ। এটি মূলত ঘরে বসেই খেলা যায়। বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউপির প্রায় প্রতিটি গ্রাম সহ আশেপাশের প্রায় সব ইউনিয়নেই আছে বেটিং বা জুয়ার এজেন্ট/ হোতা !!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অনলাইন জুয়ারু বলেন, “যারা বেটিংয়ের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে তারা সবাই শিক্ষিত এবং অনলাইন প্লাটফর্মে দক্ষ। তাদের প্রতিদিন প্রায় অবৈধ জুয়া খেলে আয় হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাদের চলাফেরা আর দশজনের থেকে আলাদা। এরা আমাদের মত মানুষদের লোভের ফাঁদে ফেলে নিজেরা টাকা ইনকাম করছে। বাজীর টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। অনেকেই আবার মানসম্মান কিংবা পরিবারের ভয়ে চুপচাপ সেই টাকা ধার দেনা করে হোক পরিশোধ করে থাকে। এতে প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে”। এব্যাপারে সচেতন অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, “জুয়া নৈতিক অবক্ষয়ের একটি ফল, জুয়ার ফলে এলাকায় চুরি,ছিনতাই বৃদ্ধি পায়। আমরা অভিভাবকরা উৎকন্ঠায় থাকি, আমার ছেলে যাদের সাথে মিশতেছে তারা ভাল কিনা?? তাদের নৈতিক শিক্ষা আছে কিনা?? আমরা সন্তানদের যথেষ্ট নজরদারী করি তবুও অনেক সময় ব্যস্ততার জন্য নজর দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবে অপরাধীদের পরিচয় সে অপরাধী। যারাই অপরাধ করবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ”।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বগুড়া সদরে আইপিএল ও ওয়ান এক্স বেট জুয়ায় ভাসছে শিক্ষার্থীরাঃ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

আপডেট সময় : ১২:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
মোঃ তৌকির আহমেদ (ছদ্মনাম)। বয়স ২৫ ছুঁইছুঁই। একজন টগবগে যুবক। মা বাবার স্বপ্ন ছেলেকে একজন বড় পুলিশ অফিসার বানাবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তৌকির এখন উচ্চ শিক্ষার শেষ ধাপে। চাকুরীর জন্য পরীক্ষাও দিয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়ে ওঠেনি এখনো। মা বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তৌকির যখন বাড়ির বাহিরে থেকে পড়াশোনা করছিলো তখনই তার পরিচিত হয় তার এক সহপাঠির সাথে, নাম সাকিব হাসান (ছদ্মনাম)। তার বন্ধু তাকে বেকার জীবনে পরিশ্রম ছাড়ায় শর্টকার্ট পদ্ধতিতে বড়লোক হওয়ার গল্প শোনায়। বন্ধুর কাছে প্রচুর টাকা দেখে তৌকিরের লোভে পড়তে আর দেরী হলো না।পরিশ্রম ছাড়ায় কম সময়ে ধনী হওয়ার লোভ তাকে নিমিষেই গ্রাস করে ফেললো। সাকিব তৌকিরের ফোন নিয়ে একটি এপস ডাউনলোড দিয়ে তা ইন্সটল করে দিলো। তারপর কিছু তথ্য দিয়ে খুলে দিলো একটি আইডি। পাশাপাশি লেনদেনের জন্য নগদ, রকেট কিংবা বিকাশ একাউন্ট। সম্পন্ন হলো বেটিংয়ের ১ম ধাপ।
এইভাবেই তৌকির শুরু করলো অনলাইন জুয়ার দিকে পথ চলা। শুরুতে কিছুদিন বেটিংয়ে টাকা লাগিয়ে লাভ দ্বিগুণ হলেও পরবর্তীতে সে পালাক্রমে হারতে থাকে। একপর্যায়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় বাড়ি থেকে মিথ্যা বলে টাকা নেওয়া। তারপর নিকট বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে শুরু করলো।দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার ঋণের বোঝা। অনলাইন বেটিং বা জুয়াতে টাকা লাগিয়ে জেতার চেয়ে পরাজিত হওয়ার সংখ্যাটায় বেশি। পাওনাদারদের টাকার চাপে একসময় সে হতাশ ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু অপরদিকে লাভবান হয় অনলাইন জুয়ার যারা এজেন্ট। এরা সাধারণ, সহজ সরল মানুষদের লোভ দেখিয়ে ১টি আইডি ও টাকা লেনদেনের একাউন্ট খুলে দিয়ে টাকা দিয়ে জুয়াতে বাজি ধরতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। কারণ যিনি টাকা বাজি ধরবে তিনি জিতুক কিংবা হারুক সেই টাকার শতকরা ২% থেকে ৫% লভ্যাংশ পাবে এজেন্ট।
এখন দিনমজুর, শ্রমিক কিংবা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও অনলাইন জুয়া (ওয়ান এক্স বেট) এর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। এই জুয়াটি খেলতে শুধুমাত্র স্মার্ট ফোন থাকলেই হয় বিধায় তাদের অপকর্মের কথা অধিকাংশ অভিভাবকেরাও জানেনা। বেটিং জুয়ারুদের এখন আরো পোয়াবারো অবস্থা। কারণ তাদের বেটিং খেলার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশে অনুষ্ঠিতব্য আইপিএল ক্রিকেট খেলা। আইপিএল খেলা মূলত তাদের দেশ জাতির সুনাম বৃদ্ধির জন্য আয়োজন করা হলেও আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তিরা এটিকে বেটিং বা জুয়া খেলার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। কখনো তারা প্রতি বল, প্রতি ওভার, প্রতি রান কিংবা প্রতি উইকেটের উপরে এই জুয়া বা বাজি ধরে থাকে। 1X বেট মূলত অবৈধ ডলার ব্যবসার আরেকটা উদাহরণ। এইখানে প্রতিটি কয়েনকে ডলারে তারপর ডলারকে টাকায় ভাঙ্গানো হয়ে থাকে। যা সম্পুর্ন বেআইনী, অবৈধ, নিকৃষ্ট ও জঘন্য একটা অপরাধ। এটি মূলত ঘরে বসেই খেলা যায়। বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউপির প্রায় প্রতিটি গ্রাম সহ আশেপাশের প্রায় সব ইউনিয়নেই আছে বেটিং বা জুয়ার এজেন্ট/ হোতা !!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অনলাইন জুয়ারু বলেন, “যারা বেটিংয়ের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে তারা সবাই শিক্ষিত এবং অনলাইন প্লাটফর্মে দক্ষ। তাদের প্রতিদিন প্রায় অবৈধ জুয়া খেলে আয় হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাদের চলাফেরা আর দশজনের থেকে আলাদা। এরা আমাদের মত মানুষদের লোভের ফাঁদে ফেলে নিজেরা টাকা ইনকাম করছে। বাজীর টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। অনেকেই আবার মানসম্মান কিংবা পরিবারের ভয়ে চুপচাপ সেই টাকা ধার দেনা করে হোক পরিশোধ করে থাকে। এতে প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে”। এব্যাপারে সচেতন অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, “জুয়া নৈতিক অবক্ষয়ের একটি ফল, জুয়ার ফলে এলাকায় চুরি,ছিনতাই বৃদ্ধি পায়। আমরা অভিভাবকরা উৎকন্ঠায় থাকি, আমার ছেলে যাদের সাথে মিশতেছে তারা ভাল কিনা?? তাদের নৈতিক শিক্ষা আছে কিনা?? আমরা সন্তানদের যথেষ্ট নজরদারী করি তবুও অনেক সময় ব্যস্ততার জন্য নজর দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবে অপরাধীদের পরিচয় সে অপরাধী। যারাই অপরাধ করবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ”।