বগুড়া ১২:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
নোটিশ ::
"বগুড়া বুলেটিন ডটকম" এ আপনাকে স্বাগতম। বগুড়ার প্রত্যেক উপজেলায় ১জন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে। ফাঁকা উপজেলাসমূহ- সদর, শাজাহানপুর, ধনুট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম

চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন চিরিরবন্দরের চাষিরা

এনামুল মবিন সবুজ,দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:১১:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩
  • / 96
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
কৃষিনির্ভর জেলা দিনাজপুর এখানকার মাটিও উর্বর। ধান, লিচু, ভুট্টাসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন বেশি হয় এই জেলায়। খাদ্য উৎপাদনে যথেষ্ট অবদান রাখছে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাই। এখানে ধান, লিচু ও ভুট্টার পাশাপাশি সমতল ভূমিতে চা চাষের সাফল্য দিন দিন বেড়েই চলছে। পতিত জমি ছাড়াও ধান ও ভুট্টার জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। চা চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন চিরিরবন্দর উপজেলার চাষিরা।
২০১৪ সালে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমি দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিধি বেড়ে জেলার বোচাগঞ্জ, পার্বতীপুর, বিরামপুর , খানসামা ও চিরিরবন্দরে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চা। চা বাগানে সব গাছে উঁকি দিতে শুরু করেছে দুটি পাতাার একটি নতুন কুঁড়ি। শুরু হয়েছে পাতা সংগ্রহের ব্যস্ততা।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কয়েকটি উপজেলায় প্রায় ১৪ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ধান-লিচুর জেলায় চা পাতার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। চা বাগানগুলোতে স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করছে। আগে নারীরা বাসায় বেকার বসে থাকত। এখন চা বাগানে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনছে।
বাগানের চা শ্রমিকরা বলেন, চা বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আগে বাসায় বসে থাকতাম, কোনো কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে সংসারে সহায়তা করতে পারছি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি। তবে নারী শ্রমিকদের মজুরিটা কম হয়েছে। আমরা চাই আমাদের মজুরি আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
তারা আরো বলেন,আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম। বাসা থেকে আমার স্বামী কাজ যেতে নিষেধ করত। এখন আমার স্বামী-স্ত্রী দুজনে মরিয়ম টি বাগানে কাজ করি। কৃষি কাজ তো সব সময় থাকে না। আগে কাজ না থাকলে বাসায় বসে থাকতে হতো। এখন বাড়ির সঙ্গে চা বাগান হওয়ায় দুজনে মিলে চা বাগানে কাজ করে আমাদের সংসারে অভাব দূর করছি।
চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম টি বাগানের মালিক এম আতিকুর রহমান বলেন, কৃষির জেলা দিনাজপুর হলেও এখানকার কৃষকরা অবহেলিত। এখানকার কৃষকরা যাতে অবহেলিত না থাকে বা কৃষি শ্রমিকরাও যাতে বেকার না থাকে সেই চিন্তা থেকে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় সাতলালা ইউনিয়নের ২০২০ সালে চায়ের বাগান শুরু করি। প্রথমে প্রায় ৫ একর জমিতে শুরু করি। এক বছরের মাথায় চা পাতা তুলা শুরু করি। দেখলাম অন্য জেলার তুলনায় আমার বাগানে পাতার ফলন ভালো। তখন বাগান বাড়িয়েছি। এখন প্রায় ১০ একর জমির ওপর মরিয়ম চা বাগান। এখানে চা বাগান করে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে খুব দ্রুত আমরা এখানে চায়ের ফ্যাক্টরি বানাবো এবং মরিময় টি বাগানের চা বাইরের দেশে রপ্তানি করব।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দরের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে চা চাষ। আমাদের উপজেলার সাতনালা ও ফতেজংপুর ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চা চাষিদের। এ বছরের পাতা তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পাতার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
উল্লেখ্য,দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় চা ভালো উৎপাদন হয়। ফলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরেও চা চাষ শুরু হয়েছে। আগামীতে চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক অবস্থা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন চিরিরবন্দরের চাষিরা

আপডেট সময় : ১২:১১:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩
কৃষিনির্ভর জেলা দিনাজপুর এখানকার মাটিও উর্বর। ধান, লিচু, ভুট্টাসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন বেশি হয় এই জেলায়। খাদ্য উৎপাদনে যথেষ্ট অবদান রাখছে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাই। এখানে ধান, লিচু ও ভুট্টার পাশাপাশি সমতল ভূমিতে চা চাষের সাফল্য দিন দিন বেড়েই চলছে। পতিত জমি ছাড়াও ধান ও ভুট্টার জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। চা চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন চিরিরবন্দর উপজেলার চাষিরা।
২০১৪ সালে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমি দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিধি বেড়ে জেলার বোচাগঞ্জ, পার্বতীপুর, বিরামপুর , খানসামা ও চিরিরবন্দরে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চা। চা বাগানে সব গাছে উঁকি দিতে শুরু করেছে দুটি পাতাার একটি নতুন কুঁড়ি। শুরু হয়েছে পাতা সংগ্রহের ব্যস্ততা।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কয়েকটি উপজেলায় প্রায় ১৪ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ধান-লিচুর জেলায় চা পাতার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। চা বাগানগুলোতে স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করছে। আগে নারীরা বাসায় বেকার বসে থাকত। এখন চা বাগানে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনছে।
বাগানের চা শ্রমিকরা বলেন, চা বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আগে বাসায় বসে থাকতাম, কোনো কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে সংসারে সহায়তা করতে পারছি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি। তবে নারী শ্রমিকদের মজুরিটা কম হয়েছে। আমরা চাই আমাদের মজুরি আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
তারা আরো বলেন,আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম। বাসা থেকে আমার স্বামী কাজ যেতে নিষেধ করত। এখন আমার স্বামী-স্ত্রী দুজনে মরিয়ম টি বাগানে কাজ করি। কৃষি কাজ তো সব সময় থাকে না। আগে কাজ না থাকলে বাসায় বসে থাকতে হতো। এখন বাড়ির সঙ্গে চা বাগান হওয়ায় দুজনে মিলে চা বাগানে কাজ করে আমাদের সংসারে অভাব দূর করছি।
চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম টি বাগানের মালিক এম আতিকুর রহমান বলেন, কৃষির জেলা দিনাজপুর হলেও এখানকার কৃষকরা অবহেলিত। এখানকার কৃষকরা যাতে অবহেলিত না থাকে বা কৃষি শ্রমিকরাও যাতে বেকার না থাকে সেই চিন্তা থেকে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় সাতলালা ইউনিয়নের ২০২০ সালে চায়ের বাগান শুরু করি। প্রথমে প্রায় ৫ একর জমিতে শুরু করি। এক বছরের মাথায় চা পাতা তুলা শুরু করি। দেখলাম অন্য জেলার তুলনায় আমার বাগানে পাতার ফলন ভালো। তখন বাগান বাড়িয়েছি। এখন প্রায় ১০ একর জমির ওপর মরিয়ম চা বাগান। এখানে চা বাগান করে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে খুব দ্রুত আমরা এখানে চায়ের ফ্যাক্টরি বানাবো এবং মরিময় টি বাগানের চা বাইরের দেশে রপ্তানি করব।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দরের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে চা চাষ। আমাদের উপজেলার সাতনালা ও ফতেজংপুর ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চা চাষিদের। এ বছরের পাতা তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পাতার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
উল্লেখ্য,দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় চা ভালো উৎপাদন হয়। ফলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরেও চা চাষ শুরু হয়েছে। আগামীতে চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক অবস্থা।